স্ত্রীর মৃত্যুর পরদিনই পদ্মা নদীতে ডুবে যাওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা সালাউদ্দিন কাদেরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে দুর্ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তার লাশ উদ্ধার করে। রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিসের লিডার আবদুর রাজ্জাক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, উদ্ধারের পরে সালাউদ্দিনের কাদেরের মরদেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে ফায়ার সার্ভিসের ডুবরি দলের নির্দেশনায় অনেকগুলো বরশি একসঙ্গে দিয়ে তার লাশ পদ্মা নদী থেকে তোলা হয়।
এর আগে শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের বালিগ্রাম এলাকার পদ্মা চরে পারিবারিক পিকনিকে গিয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী মাঞ্জুরী তানভিরের। একই সময়ে নিখোঁজ হন তানভিরের স্বামী সালাউদ্দিন কাদের। দুর্ঘটনার পরদিন মৃত অবস্থায় উদ্ধার হলো ব্যাংক কর্মকর্তা সালাউদ্দিন কাদেরের মরদেহ। মৃত স্বামী-স্ত্রী গোদাগাড়ী পৌরসভার শ্রীমন্তপুর এলাকার বাসিন্দা। একই পরিবারের দুজনের মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া মেনে এসেছে।
গোদাগাড়ী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার নবীর উদ্দিন জানান, ঘটনার পর থেকেই রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিসের ডুবরি দল অভিযান পরিচালনা শুরু করে। অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় অভিযান স্থগিত করা হয়। শনিবার সকালে আবার উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গোদাগাড়ী থানার ওসি কামরুল ইসলাম জানান, লাশ পাওয়া গেছে। আইনগত ব্যবস্থা শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত সালাউদ্দিন কাদের ও তার স্ত্রী মাঞ্জুরী জাতীয় দলের ক্রিকেটার সানজামুল ইসলামের পরিবারের সদস্য। সানজামুলের ভাই শামীম জানান, তাঁদের আট ভাইয়ের মধ্যে একজন কানাডায় আছেন। ওই ভাই ছাড়া পরিবারের সবাই পিকনিকে গিয়েছিলেন। এমনকি যে বোন মারা গেছেন, তাঁর শাশুড়িও ছিলেন। তিনি বলেন, শুক্রবার দুটি বড় নৌকা একসঙ্গে বেঁধে ডেকোরেটর দিয়ে সাজিয়ে তাঁরা রওনা দিয়েছিলেন। দুপুরে নদীর চরে বাবুর্চিরা রান্না করছিলেন। তখন তাঁরা সবাই নদীতে নেমে গোসল করছিলেন। এ সময় তিনি ভগ্নিপতি সালাহউদ্দিনের ডাক শুনতে পান। ‘ভাই বাঁচান, নিশি ডুবে গেছে, আমিও ডুবে যাচ্ছি।’ শামীম বলেন, ‘তিনি এইটুকু শুধু শুনতে পেয়েছেন। তারপরই পানিতে ঝাঁপ দিয়েছেন।
শামীম বলেন, তাঁর ছেলে তাশাফ ফুফুকে খুব ভালোবাসত। ও বল নিয়ে পানিতে ভাসছিল। সে ফুফুকে উদ্ধার করতে গিয়ে ভেসে যাচ্ছিল। তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে তিনিও (শামীম) ডুবে যাচ্ছিলেন। এক মাঝি তাঁর হাত ধরে টেনে তোলেন। তিনিসহ ছেলে বেঁচে যান। তার বোনটাকেও মাঝিরা টেনে তুলেছিলেন। তখনো তার নিশ্বাস চলছিল। প্রথমে তাঁকে গোদাগাড়ী হাসপাতালে এবং পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাজশাহীতে ভর্তি করার পরই তাঁর মৃত্যু হয়। সর্বশেষ স্ত্রীর মৃত্যুর পরদিনই অর্থাৎ শনিবার উদ্ধার করা হয় সালাউদ্দিনের কাদেরের মরদেহ।