১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় আড়াই হাজার প্রার্থীকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেওয়া নিয়োগের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে যাচ্ছে সরকার।

গত জুন মাসে নয়টি রিট আবেদন শুনানি শেষে আড়াই হাজার প্রার্থীকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলো হাইকোর্ট। এর আগে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তে এ নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২ হাজার ২০৭ প্রার্থী নিয়োগ পেয়েছিলেন।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) এক শীর্ষ কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাবার্তা কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল তালিকাভুক্ত করে ৭০ হাজার শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

যদিও ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা আসন্ন চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে পদ সংরক্ষণ করে তাদের নিয়োগ দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিও শূন্যপদে নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএ ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নিবন্ধন পরীক্ষায় তিন ধাপে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা শেষে চূড়ান্তভাবে মোট ১৭ হাজার ২৫৪ জন উত্তীর্ণ হলেও সবাই নিয়োগ পাননি। পরে প্রার্থীরা রিট আবেদন করলে সে বিষয়ে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নিবন্ধনে উত্তীর্ণ ২ হাজার ২০৭ জন পদ সংরক্ষণ করে নিয়োগ সুপারিশ পেয়েছেন। কিন্তু যারা রিট করেননি তারা নিয়োগ পাননি।

প্রার্থীরা জানান, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ পাওয়ার পর ১৩তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে যারা নিয়োগ পাননি, তারা একাধিক রিট মামলা করেন। তারপর গত ১ জুন ২ হাজার ৫০০ জন প্রার্থীকে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলো হাইকোর্ট। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাস থেকে কার্যকর হওয়া বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয় কর্তৃপক্ষ আইনের অধীনে এনটিআরসিএ সনদ দেয়া শুরু করে। এই সনদগুলো শুধু নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন করার যোগ্যতা অর্জনের জন্য। এক কথায় প্রাক-যোগ্যতা নির্ধারণী। মানে এই সনদ নিয়ে ফের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষায় বসতে হবে। সেখানে উত্তীর্ণ হলেই নিয়োগপত্র, যোগদান ও এমপিওভুক্তি। কিন্তু ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর থেকে নিয়ম বদলে যায়।

১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা বলছেন, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের শেষে সিদ্ধান্ত ছিলো- এনটিআরসিএ শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করবে ও নিয়োগ সুপারিশ করবে। পরে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের উপজেলা, জেলাভিত্তিক মেধাতালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ সুপারিশের ফল প্রকাশ করবে। সে প্রেক্ষিতে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।

পরীক্ষার সময় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমাদের নিয়োগ পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিন ধাপে তথা প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভায় অংশ নিয়ে চূড়ান্তভাবে ১৭ হাজার ২৫৪ প্রার্থী এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। উত্তীর্ণদের নিয়োগ সুপারিশের আশ্বাস দেয়া হলেও নিয়োগ দেয়া হয়নি। তাই একাংশে ২ হাজার ২০৭ জন আদালতের দারস্ত হয়ে নিয়োগ সুপারিশ পেয়েছেন। একইভাবে বাকিদের বিষয়েও হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। আমরা হাইকোর্টের রায় অনুসারে নিয়োগ সুপারিশ চাই। একাংশকে নিয়োগ দেয়া হবে আর বাকীদের নিয়োগ দেয়া হবে না এটা একেবারেই ঠিক না।