অনেকের মুখে দুর্গন্ধ হয় মাত্রাতিরিক্ত। এ কারণে তার সঙ্গী তাকে অবহেলা করেন। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আসুন জেনে নেয়া যাক আমরা কিভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি।
মানুষের মুখে কেন দুর্গন্ধ হয় তার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ইমপ্রেস ওরাল কেয়ারের অভিজ্ঞ দন্ত রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. মো: ফারুক হোসেন।
অ্যালকোহল সেবন করলে:
অ্যালকোহল যদিও তরল পদার্থ তারপরও শুষ্ক মুখের সৃষ্টি করে থাকে। এটি সেবনের ফলে মুখে লালার নিঃসরণ কমে যায়। আর লালার নিঃসরণ কমে গেলে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হয়। তখন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। যার ফলে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে মুখে দুর্গন্ধ বা মর্নিং ব্রেথ হয়।
করণীয়:
আপনাকে অবশ্যই অ্যালকোহল বর্জন করতে হবে। আবার রাতের খাবার গ্রহণেও সতর্ক থাকতে হবে। যেসব খাবার লালার প্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে সেগুলো খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। যেমন, রাতে কফি বা ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় পান করলে প্রস্রাব বেশি হবে এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাবে। মৃদু ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি হতে পারে। যার ফলে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হবে এবং মর্নিং ব্রেথ দেখা দিবে।
মুখে লালার পরিমাণ কমে যাওয়া:
মুখে লালার উৎপাদন এবং প্রবাহ কমে গেলে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্ম এবং বংশবৃদ্ধি হয়ে থাকে। সাধারণত রাতের বেলায় দীর্ঘ সময় আমরা ঘুমন্ত অবস্থায় মুখ বন্ধ করে থাকি। তাই স্বাভাবিকভাবেই লালার প্রবাহমাত্রা কমে যায় এবং মুখ শুষ্ক হয়ে যায়।
সুগারের মাত্রা বেশি হলে:
রাতে যদি রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি হয় তাহলে শুষ্ক মুখ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত সুগারের কারণে কিডনি আর কাজ করতে পারে না। তাই অতিরিক্ত সুগার প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়। যার ফলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। আর ডিহাইড্রেশন হলে শুষ্ক মুখ দেখা দিবে। শুষ্ক মুখের কারণে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এবং মর্নিং ব্রেথ দেখা দিতে পারে।
মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে:
ঘুমানোর সময় রাতে মুখ দিয়ে শ্বাস নিলেও মুখ শুষ্ক হয়ে যায়। নাকে কোনো প্রতিবন্ধকতা বা পলিপাস থাকলে অথবা মুখ খোলা রেখে ঘুমালে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হয়। এছাড়া ক্রমাগত দুশ্চিন্তা, ক্যানসার চিকিৎসার সময় কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি গ্রহণ করলেও শুষ্ক মুখ হতে পারে। আর শুষ্ক মুখ হলেই আপনার মর্নিং ব্রেথ দেখা দিবে। ছাড়া ক্রনিক সাইনোসাইটিস, এসিড রিফ্লাক্স বা এসিড উদ্গিরণ, লালাগ্রন্থির রোগ এবং অন্যান্য আরো কিছু রোগের কারণে মর্নিং ব্রেথ হতে পারে। দেখা যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধু মর্নিং ব্রেথ নয় বরং সারা দিনই মুখে দুর্গন্ধ হয় অনেকের।
সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ না করলে:
যদি দাঁত ব্রাশ এবং ফ্লস ঠিকভাবে না করা হয় এবং জিহবা পরিষ্কার না করলে মর্নিং ব্রেথ হতে পারে। সর্বদা মুখের স্বাস্থ্য অবশ্যই ভালো রাখতে হবে। মর্নিং ব্রেথ অনেক ক্ষেত্রে পেরিওডন্টাল রোগের লক্ষণ হিসাবে দেখা দেয়। তাই এক্ষেত্রে মত দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে নবে। এছাড়া রাতে ঘুমানোর সময় এক থেকে দুই গ্লাস পানি পান করবেন। রাতে ঘুম থেকে জেগে ওয়াশরুমে গেলে পুনরায় শোয়ার সময় অবশ্যই এক গ্লাস পানি পান করবেন। তবে যদি লালাগ্রন্থির কিছু রোগ এবং ওষুধের কারণে শুষ্ক মুখ সৃষ্টি হয় তাহলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।