মাধ্যমিকে ছুটির মধ্যে ক্লাস নেয়ার পায়তারা চালাচ্ছে এক শ্রেণীর শিক্ষক, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) থেকে দেশের সকল পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শুরু হচ্ছে দীর্ঘ ছুটি। টানা ৩৬ দিন ছুটি তথা বন্ধ থাকবে দেশের সকল মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, রোজা ও ঈদের পর বিদ্যালয়গুলো খুলবে ২৭ এপ্রিল। রোজার মধ্যেই অন্তত ১৫ দিন মাধ্যমিক পর্যায়ের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকরা বলছেন প্রতিষ্ঠানের এমন সিদ্ধান্তে স্কুলে যেতে তারা বাধ্য। তবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বুধবার (২২ মার্চ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (বিদ্যালয়) সোনা মনি চাকমা গণমাধ্যম কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সোনা মনি চাকমা বলেন, শিক্ষা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সরকার থেকে এই ছুটি নির্ধারণ করা হয়েছে। কোন প্রতিষ্ঠান প্রধান চাইলেই শিক্ষকদের দিয়ে ছুটির মধ্যে স্কুল চালু বা শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরিচালনা করতে পারবে না। এমন কাজ কেউ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা রোজার মধ্যে স্কুল খোলা রাখতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধানের এমন নির্দেশনায় অনেকে বিপাকে পড়েছেন।
এই বিষয়ে রাজধানীর একটি স্কুলের শিক্ষক নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, এমন সিদ্ধান্তে আমরা কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। যে কারণে প্রধান শিক্ষকের সিদ্ধান্তে আমরাও স্কুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আর এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) বিপুল চন্দ্র বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্কুল চালু করার কোন সুযোগ থাকার কথা নয়। কিন্তু ছুটির মধ্যে ক্লাস চালু রাখা হলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা জানানো হয়নি। যে কারণে অনেকে এর সুযোগ নিতে পারে।
ঢাকার বাইরের একাধিক স্কুলের শিক্ষকরা জানান, স্কুলে পাঠদান করে রোজা থাকা কষ্টকর। সরকার থেকে এজন্য আমাদেরকে ছুটি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ছুটির মধ্যে ক্লাস চালু রাখার পায়তারা চলছে।
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাখী, নববর্ষ এবং ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি- বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সমূহে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা এবং টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা করেছে মন্ত্রণালয়
অন্যদিকে মাধ্যমিকের শিক্ষকরা যেখানে ৩৬ দিন ছুটি পাচ্ছেন সেখানে প্রাথমিকে ২০ দিন ছুটি পাবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ছুটি নিয়ে ভিন্নতা থাকায় শিক্ষকদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। প্রাথমিকে শিক্ষা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৭ এপ্রিল থেকে ছুটি শুরু হচ্ছে। ছুটি চলবে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত। এ নিয়ে প্রাথমিকের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যেও অসন্তোষ বেড়েছে।
প্রাথমিকের একাধিক শিক্ষক বলেন, একদেশে দুই নিয়ম চলতে পারে না। রোজা রেখে ক্লাস করানো খুব কষ্টকর। তাই প্রাথমিকে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের বিবেচনার আহ্বান জানান তারা।