কনুই দিয়ে লিখে জান্নাতুল নিপার জিপিএ ৫

অনলাইন ডেস্ক: দৈনিক শিক্ষাবার্তা।

0
388
কনুই দিয়ে লিখে

এবার কবজিবিহীন দুই হাতের কনুই দিয়ে লিখে জিপিএ ৫ পেয়েছেন আশুলিয়ায় বেপজা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস। তার এ কৃতিত্বে দারুণ খুশি শিক্ষকসহ প্রতিবেশীরা।

৯ বছর আগে আশুলিয়ায় ভাড়া বাড়ির ছাদে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে দুর্ঘটনায় শিকার হয় শিশু জান্নাতুল ফেরদৌস নিপা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুই মাস ছিলেন চিকিৎসাধীন। জান্নাতুল প্রাণে বেঁচে গেলেও দুইটি হাতের কবজি থেকে নিচের অংশ কেটে বাদ দিতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। তখন কেবল পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল। হঠাৎ সাজানো জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। তবে দমে যায়নি। সহপাঠীর সহযোগিতা নিয়ে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ মেলে। জান্নাতুল মুখে বলেছে সহপাঠী খাতায় লিখেছে। এভাবে উত্তীর্ণ হয়। তবে সেসময় তাঁর উপলব্ধী হয়, এতে সময় বেশি লাগে, কষ্ট হলেও নিজেই লিখতে শিখব। এভাবেই নতুন যুদ্ধের শুরু হয় তাঁর।

এর আগেও সে জেএসসি পরীক্ষায় ৪.৬৯ এবং ২০২০ এর এসএসসি পরীক্ষায় পান জিপিএ ৪.৭২।

জান্নাতুল নিপা বলেন, পিএসসিতে এক সহযোগীর মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। আমি বলি, আরেকজন লেখে। এতে দেরি হয়। এরপর পায়ের ওপর বালিশ দিয়ে লেখা অনুশীলন শুরু করি। ধীরে ধীরে সুন্দর করে লেখা আয়ত্বে আসে।

নিপার হাতের লেখা দেখলে কেউ বলতে পারবে না, এই লেখা আঙুলের ছোঁয়া পায়নি। নিপার ইচ্ছা চিকিৎসক হওয়া। তাই কষ্ট হলেও প্রবল আগ্রহের জেরে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন বিজ্ঞান বিভাগেই।

নিপা আরও বলেন, আমার যখন হাত কেটে ফেলে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কিভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যাবো বুঝতে পারছিলাম না। তবুও মনে মনে সংকল্প করি, আমাকে এগিয়ে যেতে হবে। তাই কষ্ট হলেও আমি লেখার চেষ্টা করতাম বসে বসে। এখন লিখতে তেমন অসুবিধা হয় না। সময় একটু বেশি লাগে এই যা। আমি ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। আমাকে এতদিন যারা সহায়তা করেছেন তাদের আমি অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

জান্নাতুল নিপার মা নিলুফা বেগম বলেন, আমি বর্তমানে আমার ভাইয়ের সঙ্গে থাকি। ভাই চা দোকান চালায়। সেখান থেকেই নিজের পরিবারের পাশাপাশি আমাদের দেখাশোনা করে। এ ছাড়া সাইফুল চেয়ারম্যান নিপার সমস্ত পড়ালেখার খরচ চালিয়ে এসেছে। আমি সবার কাছে আমার মেয়ের জন্য দোয়া চাই। সে যেন ডাক্তার হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে পারে।

জান্নাতুল ফেরদৌস নিপার কলেজের পড়াশোনার সব দায়িত্ব নিয়েছিলেন স্থানীয় ধামসোনা ইউপি চেয়ারম্যান ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, জান্নাতুল খুব বুদ্ধিমতী। ওর লেখাও খুব সুন্দর। ওর লেখা দেখে আমি মুগ্ধ। আমার পক্ষ থেকে যতদিন যতটুকুই সম্ভব আমি ওকে সাহায্য করে যাব। কনুই দিয়ে লিখে যে এতো ভালো রেজাল্ট করতে পারে তার প্রতিভাকে কোনো ভাবেই নষ্ট হতে দেয়া যায় না।